আমার শিক্ষক না হয়ে ওঠার গল্প
শ্যামল কুমার মুখার্জী
বিসিএস’র ভাইভা চলছিল সেদিন। আমি খুলনা সেন্টার থেকে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম বলে একেবারে শেষ দিনে ভাইভার কল পেয়েছিলাম। ভাইভা কক্ষে ঢুকছি ঠিক তখনই বোর্ড চেয়ারম্যান (পিএসসির তৎকালীন মেম্বার) স্যার বলে উঠলেন ‘মিস্টার শ্যামল কুমার মুখার্জী, আ গ্রাজিউয়েট ইন লিট্রেচার, কারেন্টলি স্টাডিং বিজনেস, বাট প্রেফারিং পুলিশ সার্ভিস। ইট’স নট এনকারেজিং, নট ডিজকারেজিং, বাট ভেরি অ্যামেজিং। হাউ ডু ইউ এক্সপ্লেইন ইওর চয়েস?’
প্রশ্ন শুনে ঘাবড়াইনি। জীবনের প্রথম বিসিএস’র ভাইভা। কাজেই হারানোর কিছুই নেই। উত্তর দেওয়া শুরু করলাম। মিনিট পনেরো পরে স্যার আমাকে বললেন, ‘তুমি অনার্সে সেকেন্ড প্লেস করেছো, আমরা তোমার সাবজেক্টে ভাল টিচার পাই না। তাই তোমাকে শিক্ষা ক্যাডারে দিতে চাই।’ আমি ভাবলাম, স্যার মনে হয় আমাকে পছন্দ করে ফেলেছেন, কাজেই পোলাইটলি বারগেইনে যাওয়া যেতে পারে।
আমি বললাম, স্যার আমি জানি আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক। আপনার ও আপনার পেশার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি আমি ‘পুলিশ’ ক্যাডার পছন্দ করি। আমার লেখাপড়া ও মানসিক প্রস্তুতি পুলিশ ক্যাডারকে ঘিরেই। তাছাড়া আমি তো শিক্ষা ক্যাডার চয়েস লিস্টেই দেই নি, কারণ আমি মাত্র অনার্স পাশ করে মাস্টার্স করছি। প্রতি বছর বিসিএস পরীক্ষা হলে আমি জীবনে নয় বার (nine times) পরীক্ষা দিতে পারবো। প্রতিবারই আমি পুলিশ ক্যাডারই চাইবো। আপনার বোর্ড থেকে না পেলেও অন্য কোনো বোর্ড থেকে আমার এই চাকরিটা হয়ে যাবে।
জানিনা, আমার পছন্দের দৃঢ়তা স্যারের কতটুকু পছন্দ হয়েছিল। তবে ওই বোর্ড থেকেই জাতীয় মেধায় আমার পুলিশের চাকরিটা হয়ে যায়। এখন পুলিশ হলেও শিক্ষকতার সুযোগ মাঝে মাঝে পেয়ে যাই। হয়তো নিজের অজান্তেই বোর্ড চেয়ারম্যান স্যারের মনোবাসনা পূর্ণ করার প্রয়াস পাই।
লেখক: নাটোরর সাবেক পুলিশ সুপার
বর্তমানে-Deputy Commissioner of Police at Dhaka Metropolitan Police