Homeমুক্তমতআমরা এই মহাবিশ্বের অংশ - স্বকৃত নোমান

আমরা এই মহাবিশ্বের অংশ – স্বকৃত নোমান

আমরা এই মহাবিশ্বের অংশ – স্বকৃত নোমান

কী চমৎকার ভোর! প্রতিটি ভোর যেন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মতো। শিশুই বটে। প্রতিটি ভোরে মহাবিশ্বের উদর থেকে নতুন করে জন্ম নেয় পৃথিবী। পুবের আকাশে লালীমা। যেন আগুন জ্বলছে। কিংবা আগুন নয়, রক্তগঙ্গা জেগেছে। যেন লক্ষ-কোটি প্রাণী হত্যা করে রক্তের সমুদ্র তৈরি করা হয়েছে। সূর্য এখন এই রক্তসাগরে স্নান করছে। একটু পর ধোপদুরস্ত হয়ে পৃথিবীতে আসবে ডিউটি পালনে।

মানুষের জীবনে কি সূর্যের প্রভাব আছে? সম্ভবত আছে। জ্যোতির্বিদ হলে বলতাম, সম্ভবত নয়, নিশ্চিতভাবেই আছে। মানবজীবনে সূর্যের প্রভাব মিথ্যে নয়। একারণেই বুঝি প্রাচীন ভারতীয়রা সূর্যকে দেবতার মর্যাদা দিয়েছিল? ‘ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহষ্মি দিবাকরম্।’ জ্যোতিবিদ্যার চর্চা তো ছিল ভারতবর্ষে। চন্দ্র ও সূর্যের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হতো। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার দ্বারা বছরকে মাসে ভাগ করা হতো। জ্যোতির্বিদ্যার কথা উল্লেখ আছে বৈদিক শাস্ত্র বেদে।

শুধু ভারতবর্ষে কেন, তাবৎ এশিয়ায় জ্যোতিবিদ্যার চর্চা ছিল। আল বেরুনির জীবনীতে তা দেখতে পাই। খাওয়ারিজমে মামুনী সুলতানের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে জন্মভূমিতে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন বেরুনী। সুলতান মামুন বিন মাহমুদের ভাই আবুল হাসান আলী ছিলেন তাঁর ভক্ত। এক পত্রে বেরুনীকে তিনি দেশে ফিরে আসার অনুরোধ জানালেন। বেরুনী মাতৃভূমি খাওয়ারিজমের ফিরে আসেন এবং সুলতানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার পাশপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। মানমন্দির নির্মাণ করে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণ কার্য চালিয়ে যান।

আহা আল বেরুনী! এমনই কোনো ভোরে তিনি বুঝি ভারতবর্ষের পথে পথে হাঁটছিলেন। এমনই কোনো ভোরে বুঝি তিনি বসে বসে ‘ভারততত্ত্ব’ লিখছিলেন। দোয়াত-কলমে। সেকালে যদি কম্পিউটার থাকত, সেকালে যদি ইন্টারনেট-ফেসুবক থাকত, তবে তিনি এমন কোনো মনোরম ভোরে সূর্যকে সামনে রেখে কোলে ল্যাপটপ নিয়ে ভারতবর্ষের একটি চমৎকার ভোরের বর্ণনা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করতেন।

মানবজীবনে চন্দ্রের প্রভাবও সত্য। শুধু চন্দ্র-সূর্য কেন, সমস্ত নক্ষত্রের প্রভাব আছে মানবজীবনে। কেননা আমি এই মহাবিশ্বের অংশ। আমরা এই মহাবিশ্বের অংশ। প্রতিটি প্রাণ-অপ্রাণ এই মহাবিশ্বের অংশ। সুতরাং প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক।

মহাকালে রেখাপাত
১৬.০৭.২০২১

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments