Homeসাহিত্যকবি জাহিদ হাসান এর কবিতা ভাত ও ভাতার

কবি জাহিদ হাসান এর কবিতা ভাত ও ভাতার

ভাত ও ভাতার

জাহিদ হাসান

 

ভাতের সাথে বাংগালির আত্মার সম্পর্ক। যে ‘স্বামী’কে দেবতা বলা হতো, সেই স্বামীকে ‘ভাতার’ও বলা হতো। ভাত দিত, তাই সে ভাতার। ‘ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই’ বলে মুখ ঝামটা দিয়েছেন নারীরা। অভিমান করে কেউ কেউ এখনও স্বামীদের বলেন, ‘তোমার ভাত আর খাবো না’। মানে তোমাকে ছেড়ে চলে যাব।

এক ফসলি জমি ছিল। আষাঢ়- শ্রাবণ ছিল প্রচন্ড অভাব। দিনের পর দিন ভাত থাকতো না। ভাতের হাড়িতে কেবল কাঁঠাল সেদ্ধ খেতে দেখেছি। ভিখারিদের ভাত চাওয়ার সাহস ছিল না। ক্ষীণ কন্ঠে ‘একটু ফ্যান দ্যাও গো’ বলে দুয়ারে দাঁড়াত। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালি’ বা হুমায়ুন আহমেদের ‘মধ্যাহ্ন’তে এই ভাত-ফ্যান-দুঃখ -বেদনার গল্প আছে। সত্য গল্প।

সেই দেশে কৃষিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। এদেশের কৃষিবিদরা ইরি, বিরি ধান আবিষ্কার করেছেন আর কৃষকেরা মাটির গায়ে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে সেই ধান চাষ করেছেন। এবং সেই ভরসায় এদেশের রাজনৈতিক নেতারা কম দামে ভাত খাওয়াবে বলে ভোট নিয়েছে।

তাই হিস্টরিকালি এন্ড কালচারালি, আমাদের কাছে বলগ ওঠা ভাতের হাড়ির গুড়গুড় শব্দ মালহারের চেয়েও মধুর, ভাঁপ ওঠা গরম ভাতের গন্ধ শ্যানেলের চাইতেও সুগন্ধী।

থালা ভরা শিউলিফুলভাতের সাথে সামান্য তরকারি আর একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাবার ব্যবস্থা করে দিলেই যে বাংগালীকে অনায়াসে শাসন করা যায়, তার ভাত নিয়ে খোটা দেওয়া মানে তার মরমে ব্যথা দেওয়া। এই ব্যথা বুঝতে একটা মাটিগন্ধী হৃদয় থাকতে হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments