টক শো দেখা হয় না। কারণ নষ্ট করার মতো সময় নেই।
তবে কয়েকজনের কথা শুনে ইউটউবে ঢুকে কিছু দেশি টক-শো দেখলাম। দেখলাম ডয়চে ভেলেরও। শুনেছিলাম, গোলাম মওলা রনির মতো আধাশিক্ষিত লোকের কাছেও নাকি কুপোকাত হয়ে যায় আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা। দেখলাম, অবস্থা অনেকটা সেই রকমই।
আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাঙ্কের ঘনিষ্ঠ একজনের মুখে ক্ষোভের কথা শুনলাম– তাদেরকে টাকা দেওয়া হয়, পদক দেওয়া হয়, বিদেশে ঘুরান দেওয়া হয়, ফ্ল্যাট দেওয়া হয়, হজ করানো হয়, ব্যবসা দেওয়া হয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদ দেওয়া হয়– নিক তারা। কিন্তু নিজের দায়িত্বটা তো পালন করতে হবে তাদের!
আমি হেসে বললাম– তারা তো এসব পাচ্ছেন ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভূমিকা পালনের বিনিময়ে। ঐ সময় পর্যন্ত তারা পড়াশোনাটা করতেন। এখন এই কয়েক বছরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাকি বই লেখা হয়েছে আট হাজার। সেগুলো লিখতে গিয়ে, পড়তে গিয়ে, বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখতে গিয়ে, বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বক্তৃতা করতে গিয়ে, আর অন্যকিছু পড়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে। সময় তো দিনে সর্বমোট চব্বিশ ঘণ্টাই। তাছাড়া জীবনটা উপভোগ করার বয়স চলে যাচ্ছে। তাই ইতিহাস, দর্শন, বিশ্বপরিস্থিতি, অর্থনীতির বাঁক পরিবর্তন, রাজনৈতিক দর্শনের পাল্টে যাওয়া চেহারা– এগুলি পড়া এবং ভাবার মতো খাটুনির কাজ করতে পারা তাদের পক্ষে এখন কঠিনই।
তাছাড়াও একটা বড় সমস্যা আছে।
কী?
আওয়ামী লীগের নীতি-উদ্দেশ্য হিসাবে যা কিছু লেখা আছে, সরকারের কাজ-কাম বেশিরভাগই তার উল্টোমুখি। যেমন লেখা আছে অসাম্য দূরীকরণের কথা, অথচ সরকার নিয়েছে মুক্তবাজার পুঁজিবাদী অর্থনীতির পথ– পুরোই ১৮০ ডিগ্রি উল্টো। বেচারা বুদ্ধিজীবীরা কীভাবে মেলাবে এই দুটোকে?
লেখা আছে, শিক্ষা হবে বিজ্ঞানমনস্ক, একমুখি, যুগোপযোগী। কিন্তু বাস্তবে প্রাইমারি আর মাধ্যমিকে ১১/১২ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা। একটার সাথে আরেকটার কোনো মিল নেই। সমশিক্ষা না থাকলে একটা জাতি গড়ে উঠবে কীভাবে?
‘কথায় উত্তরমেরু’ আর ‘কাজে দক্ষিণমেরু’– এই দুটোকে কী আর টেনে এক জায়গায় আনা সম্ভব?
কিন্তু গোলাম মওলা রনি বা তার মতো লোকদের কোনো দার্শনিক সততার জায়গা নেই। বস্তুত দর্শনগত কোনো অবস্থানই নেই। তাদের কাছে এইভাবে নাস্তানাবুদ হওয়া কি মানা যায়?
হেসে বললাম– এমন কিছু বুদ্ধিজীবী ভাড়া করেন, যারা কুযুক্তিকেও যুক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম। ফরহাদ মজহারকে পাবেন না সম্ভবত। তবে তার মতো কাউকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করতে পারেন। অথবা দলের লিখিত দর্শন আর সরকারের কার্যক্রমকে একলাইনে আনেন। তাছাড়া অন্য কোনো পথ বোধহয় নেই।
তবে পরেরটা আর পারবেন বলে মনে হয় না।