Homeগুরুত্বপূর্ণচলনবিলে শ্রমিক সঙ্কট, এক মণ ধানের দামে একজন শ্রমিক

চলনবিলে শ্রমিক সঙ্কট, এক মণ ধানের দামে একজন শ্রমিক

নাটোর নিউজ সিংড়া:নাটোরের চলনবিল জুড়ে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার ব্যস্ততা। ঘরে উঠছে ধান, তবে খুশি নেই কৃষকের মনে। কয়েক দফা ঝড় বৃষ্টিতে মাঠের বেশিরভাগ ধান গাছ এখন পানির নিচে। তাই ফলন হচ্ছে না আশানুরূপ। অন্যদিকে, শ্রমিকের মজুরিও গুনতে হচ্ছে গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। এক মণ ধানের দামেও মিলছে না একজন শ্রমিক।

 

নাটোরের সিংড়ার চলন বিলে শ্রমিক সঙ্কট এবং বৃষ্টির কারণে ধান চাষিরা মহা বিপাকে পড়েছেন। বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় কৃষকদের এই করুণ দৃশ্য। চকসিংড়া, শোলাকুড়া, বালুয়া-বাসুয়া, শেরকোল, নিংগইন, রাখালগাছা, তাজপুর, তেমুক নওগাঁ, চৌগ্রাম, জামতলী, সাঁতপুকুরিয়া এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে এসব জানা যায়।

 

শেরকোল গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, ধান কাটার পরে বৃষ্টির কারণে শ্রমিকরা চলে গেছে। ধান বহন করার জন্য ৫ দিন শ্রমিক খোঁজার পরে অধিক মজুরিতে পেয়েছি। তবে বৃষ্টিতে ভিজে ধানের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।

 

সুকাশ ইউনিয়নের বনকুড়ইল গ্রামের মাওলানা নাজমুল হক বলেন, ধান কাটার কাজের জন্য অনেক খুঁজে ১১’শ টাকা দিনে শ্রমিক পেয়েছি। ধান আবাদে এ বছর খরচ অনেক বেশি।

 

কতুয়াবাড়ি এলাকার কৃষক সাজু আহমেদ বলেন, হাজার টাকা দিনেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আবাদে খরচ অনেক বেশি, সে তুলনায় ফলন কম। এ বছর অনেক লোকসান হবে।

 

কৃষকরা জানান, বোরো ধান যখন ফুলে বের হয়েছে, তখনই কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ নুয়ে মাটিতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের খরচের টাকাও উঠবে না। তাছাড়া, শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় শ্রমিকেরা ধান কেটে দিতে চাচ্ছে না। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

 

তবে কালবৈশাখি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম ভালো, তবে সময়মতো মাঠ থেকে ধান তুলতে পারব কি না, সেটিই দুশ্চিন্তা। কারণ, গেল কয়েকদিন আগে ধানের গাছ থেকে শিষ বের হওয়ার পর হঠাৎ কালবৈশাখি ঝড়ে অনেক কৃষকের ধান মাটিতে পড়ে গেছে।

 

শ্রমিক সংকটের কথা উল্লেখ করে একজন কৃষক বলেন, মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ এলাকায় ১১’শ টাকা মণ ধান। শ্রমিকের মজুরি বাবদ অনেক বেশি খরচ পড়ছে। ১১’শ টাকা দিন তাও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

 

মজুরি বেশি নেওয়ার বিষয়ে শ্রমিকরা বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে তো মজুরি বেশি নিতেই হবে। যে টাকা পাই, তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনতেই শেষ। চালের দাম বেশি। তেল, মাছ, মাংসের দামও বেশি।

 

আরেকজন শ্রমিক বলেন, ‘খুব ছোট থেকে বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজ করে থাকি। এর আগে যে মজুরি পেতাম, তা দিয়ে সংসার চালানোর পরও ভবিষ্যতের জন্য কিছু রাখতাম। এখন যা পাই তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না।

 

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর সিংড়া উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর ছিলো, তা অর্জিত হয়েছে। তবে শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেলিম রেজা বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে এখন শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments