Homeগুরুত্বপূর্ণনাটোরে আজ মৃত্যু -৩ ছুটিরদিন নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় ক্ষোভ

নাটোরে আজ মৃত্যু -৩ ছুটিরদিন নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় ক্ষোভ

নাটোরে করোনায় ৩ জনের মৃত্যু, ছুটির দিনে নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় ক্ষোভ

নাটোর নিউজ:
নাটোরে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাদের। এনিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ জনে।  এছাড়া গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় করোনার কোন নমুনা পরীক্ষা হয়নি। এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, দিন দিন খারাপ হচ্ছে নাটোরের পরিস্থিতি। দেশের অন্যান্য জেলায় ছুটির দিনেও করোনা পরীক্ষা অব্যাহত থাকলেও নাটোরের ব্যাতিক্রম বলে মনে করছেন সচেতন সমাজ। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারী ও ডেইলি স্টার একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা নাটোরবাসী হয়তো অন্য গ্রহের মানুষ, তাই সব সময় আমরা অবহেলা বঞ্চনার শিকার হচ্ছি। সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হলেও ছুটির দিন শুক্রবারে আমাদের নাটোরে কোন নমুনা পরীক্ষা হয় না বর্তমান পরিস্থিতিতেও নাটোর হটস্পট হলেও পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেই।

বুলবুল আহমেদ আরো বলেন, টকশোতে আলোচকদের বলতে শুনেছি, নাটোর এবং চাপাইয়ের সংক্রমণ বেড়ে গেছে! এখন সেখানকার লোকজন ঢাকায় আসা বন্ধ করা না গেলে ঢাকায় সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হবে! আরে ভাই, নাটোর, চাপাইয়ের লোক মারা যাচ্ছে! তাদের কিভাবে বাঁচানো যায় সেটা নিয়ে নয় বরং আলোচনার হচ্ছে তাদের কিভাবে ঢাকায় আসা বন্ধ করা যায়! নাটোর-চাপাই, নওগাঁসহ উত্তরবঙ্গের লোকেরা আমরা কি আসলে এই দেশের মানুষ?

আমাদের হাসপাতালে কিছুই নাই, আইসিইউ, পিসিআর মেশিন, সিটিস্ক্যান, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার! এই দেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, আমলারা আমাদের কথা ভাবে কখনও? একটা পিসিআর মেশিন, সিটিস্ক্যান মেশিন, অক্সিজেন সিলিন্ডার এতগুলো মানুষের জীবনের চেয়েও মূল্যবান?

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নাটোর জেলার যুগ্ন আহবায়ক রফিকুল ইসলাম নান্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মেহেরপুরের মতো একটি ছোট্ট জেলা যেখানে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৮৮ জন। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১২৭৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৫ জন। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় রোগীর সংখ্যা ৫৫৭ জন। অথচ তাদের ১০০ বেডের জেনারেল হাসপাতাল কে পুরোটাই কোভিড ঘোষণা করেছেন। সেখানের হাসপাতালে দুটি আইসিইউ বেড রয়েছে। রয়েছে আটটি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, এছাড়া লিকুইড অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সত্তর লিটার সেকেন্ডে সাপ্লাই করার ব্যবস্থা রয়েছে যাতে করে সবকটি হাইফ্লো লোনাজল ক্যানোলা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। আর আমরা এমনই এক জেলায় বাস করি যেখানে কিছুই নেই। নাটোর হাসপাতলে কোভিড রোগীদের অবস্থা তথৈবচ। নেই আইসিইউ-সিসিইউ। একটিমাত্র হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থাকলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না আইসিইউ বেড না থাকার কারণে। অথচ আমাদের নাটোর জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে আর রোগীর সংখ্যা বর্তমানে দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুবরণ করেছেন সরকারি হিসাবেই ৬০ জন মানুষ। আজ সকালে নাটোর সদর হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৮৩ জন। আপনারাই বিচার করুন….

হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন ক্যারেসমেটিক লিডার দরকার ছিলো, কিন্তু….করোনা চিকিৎসার বেসিক অক্সিজেন ও আই সি ইউ বেড দুইটার কোনটাই করা সম্ভব হয়নাই সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেওয়া সত্বেও ।

এমনি শত শত মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন করোণা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে । নইলে যে কোন সময় মহামারী রূপ ধারণ করতে পারে। তখন সকল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মিজানুর রহমান জানান, আমাদের রয়েছে প্রচুর লোকবল সংকট। যা রয়েছে তা দিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিতেই আমরা ব্যস্ত রয়েছি। এছাড়া নাটোরে কোন ধরনের হেলথ ইন্সটিটিউট নেই কোন ন্যাশনাল নার্সিং ইনস্টিটিউট নেই , কোন ধরনের হেলথ বিষয়ে কোন ডিপ্লোমার প্রতিষ্ঠান নেই, আমাদের সেই ব্যবস্থা নেই যা সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান ছাত্রদেরকে এই বিপদের দিনে আমরা কাজে লাগাতে পারি। নওগাঁ জয়পুরহাটসহ আমাদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলাতে এসমস্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবং এই সমস্ত মেডিকেল ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনী ছাত্রদেরকে ল্যাবে ব্যবহার করা যায়।

সিভিল সার্জন আরো বলেন, তবে আগামী সপ্তাহ থেকে আমাদের ছুটির দিনেও নমুনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা শুরু করতে পারব ইনশাল্লাহ। যেহেতু বিনা পয়সায় করনা পরীক্ষার বুথ চালু হচ্ছে সেহেতু আগামী সপ্তাহ থেকে ছুটির দিনেও যাতে নমুনা পরীক্ষা হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করব বলে আশ্বাস প্রদান করেন। পাশাপাশি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর এ আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে শুরু হওয়া সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনেও নাটোর শহর সহ অধিকাংশ এলাকার সড়কগুলো ফাঁকা। নিত্য পণ্যের দোকান খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে বিপনী বিতান সহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভারি যানবাহন। বিধিনিষেধ কার্যকর করতে নাটোরের প্রবেশ পথে চেকপোষ্টসহ কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেনা-বিজিবি ও র‌্যাব সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ।

স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রনে জেলা প্রশাসনের একধিক মোবাইল টিম মাঠে রয়েছেন। গতকাল জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ৪২ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। ৪২ মামলায় ৪২ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এছাড়া নাটোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৮৩জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

 

৩ জুলাই ২০২১ রামেক হাসপাতাল করোনা আপডেট

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গেল ২৪ ঘন্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৫ জন করোনা পজেটিভ ও বাকি ৮ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ৭জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১জন, নাটোর ৩, নওগাঁ ও পাবনার ১ জন করে রয়েছেন। শুধু জুন মাসের রামেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মোট মৃত্যু হয় ৩৫৫ জনের। এতে করোনা শনাক্ত বা পজিটিভ হয়ে মারা যান ১৭৫ জন। জুলাই মাসের ১-৩ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু ৫২ জন, পজিটিভ ১৫ জন। গেল ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেলের ২টি আরটিপিসিআর ল্যাবে ৩৭৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে এদের মধ্যে ১০০ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে।

হাসপাতালের দেয়া তথ্য মতে রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্তের হার ২৬.৭৪ শতাংশ। গেল ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নতুন ৬১ জন। হাসপাতালটিতে ৪০৫ শয্যার বিপরীতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৭৮ জন রোগী। ২৪ ঘন্টায় সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৪ জন।

এদিকে জেলা সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্য মতে জেলার ৯টি উপজেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৩৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ মিলেছে ১০০ জনের। শতাংশের হারে যা ২৬.৭৪%।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগের ৮জেলায় ২৪ ঘন্টায় করোনা পজিটিভ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছেন ৪২৬ জন। ১০ মার্চ ২০২০ থেকে এ পর্যন্ত বিভাগের মোট মৃত্যু ৯২৯ জন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments