Homeসাহিত্যযুদ্ধশিশু - বানসুরি এম ইউসুফের গল্প

যুদ্ধশিশু – বানসুরি এম ইউসুফের গল্প

যুদ্ধশিশু
– বানসুরি এম ইউসুফ

আমি নীতা। আজ আমার বিয়ে। এক গ্রাম পর ছেলের বাড়ি। কখনো তাকে দেখিনি। আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল আমার। তখনো ছেলেকে দেখিনি।
সেইবার চুপিচুপি বিয়ে হচ্ছিল। কিন্তু ঠিক শেষের দিকে কিভাবে যেন জেনে গেল গ্রামের ‘মানুষ’গুলো। জারজের বিয়ে পড়িয়েছে কাজী! মেরে তক্তা বানিয়ে দিল। পালিয়ে গেল বর! আর আসেনি।
পিয়ন কাকাটা ‘মানুষ’ না! তালাকনামার খামটা হাতে দিয়ে বলে কিনা, “মা, সবুর কর। সৃষ্টিকর্তা একদিন না একদিন তোর দিকে তাকাবে!” আমি তো অবাক! “কাকা, জারজদেরকেও কি সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন?” কাকা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন। আমি কাঁদিনি।
নানার মুখে শুনেছি, মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বিষ খেয়েছিলেন। আমি মনে করতে পারি না। নানা প্রায় বলেন, আমি দেখতে মায়ের মত হয়েছি। আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মা’কে দেখি। আয়না বাধা হয়ে দাড়ায়। আদর করতে দেয় না।
পাশের বাড়ির ইশিতা, আমার অনেক ছোট। বিয়ে হয়ে গেছে বছর কয় আগে। শ্বশুড় বাড়ি থেকে বেড়াতে আসলে আওয়াজ শুনে বুঝতে পারি। বাবাকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে। আমি ঝোপের আড়াল থেকে দেখি। কিন্তু কাঁদি না।
নানাকে বলি, ইশিতার মত বাবাকে ধরে আমিও কাঁদতে চাই। নানা বলেন, এ মাটিই তোর বাবা, মাটিকে ধরে কাঁদ। আমি কাঁদি। কিন্তু মাটি আমাকে ইশিতার বাবার মত জড়িয়ে ধরেনা।
পাড়াপড়শী বলেন, পাকিস্তানি ক্যাম্পে তোর জন্ম। এ মাটি তিরিশ লক্ষ শহীদের, দুই লক্ষ মা’বোনের.., কি করে তোর বাবা হয়!
…. বর চলে আসছে। কাজী সাহেব কাবিননামায় বাবার নাম জানতে চাচ্ছেন। নানা কাঁদছেন। আমি আড়াল থেকে বলে দিয়েছি, আমার বাবার নাম ‘বাংলাদেশ’। শুনে কাজী সাহেব হো হো করে হাসছেন। আমি কাঁদছি না। একটুও কাঁদছি না….
………….
যুদ্ধশিশু
– বানসুরি
৮/১/১৭
Bansuri M Yousuf.

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments