Homeজেলাজুড়েরাণী ভবানী সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

রাণী ভবানী সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

নাটোর নিউজ: নাটোরের রাণী ভবানী সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুরা খানমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে গুরুতর অসদাচরণেরও। অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের নেতিবাচক এসিআর ও হয়রানির ভয় দেখানোসহ বিভিন্ন ভাবে শিক্ষকদের হুমকি দেয়া হয়।৩৮ বিসিএসের ৬জন শিক্ষক অগ্রিম বর্ধিত বেতনের আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোন যোক্তিক কারণ ছাড়াই মাউশিতে প্রেরন করেননি। এসব ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। করেনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের অজুহাতে নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন এই অধ্যক্ষ।

কলেজে কর্মরত ২৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৮জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রেরিত আবেদনে জানা যায় , ২০২১ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজটিতে যোগদানের পরেই তিনি পূর্ববর্তী অধ্যক্ষের গঠন করা সকল কমিটি ভেঙ্গে দেন। পাশাপাশি তড়িঘড়ি করে অর্থ সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো পছন্দের শিক্ষকদের দ্বারা গঠন করেন। কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী একই শিক্ষকের পরপর দুটি পরীক্ষার ফরম পূরণ কমিটিতে থাকার বিধান না থাকলেও সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান আজমেরী সুলতানাকে পরপর দুটি কমিটির দায়িত্ব প্রদান করেন অধ্যক্ষ। পূর্ববর্তী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গঠিত ২০২০ সালের অনার্স ২য় বর্ষ পরীক্ষা ও ফরম পূরণ কমিটি বাতিল করে পছন্দের শিক্ষকদের দ্বারা নতুন কমিটি করেন তিনি। ৩৮ বিসিএসের ৬ নবীন কর্মকর্তা ২০২১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী কলেজে যোগদান করতে এলেও অধ্যক্ষ দেরিতে আসার কারনে হেড ক্লার্কের কক্ষে বসে তারা যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বিষয়টি ওই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক গ্রুপে আলোচনা হলে সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি জানতে পেরে অধ্যক্ষ ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে মানসিকভাবে চাপে রাখেন। গত বছরের ৩০ শে জুন কলেজের শিক্ষক পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে গত জানুয়ারী মাসে শিক্ষকদের কোন মতামত না নিয়ে তিনি মনগড়া শিক্ষক পরিষদ গঠন করেন।

কলেজের কর্মরত শিক্ষকরা জানান ওই কমিটির প্রতিঅধিকাংশ শিক্ষকদের আস্থা নেই । অধ্যক্ষ মঞ্জুরা খানম অনার্স ২য় ও তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ, ২০১৮ সালের মাস্টার্স পরীক্ষা ও ২০১৯ সালের ডিগ্রি পরীক্ষা বাবদ শিক্ষকদের সম্মানির টাকা এখনও বন্টন করেননি। এসব পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির নিকট থেকে দাবীকৃত অর্থ না পাওয়ায় দীর্ঘসময় অবন্টিত অবস্থায় রয়েছে এই সম্মানীর টাকা। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ দুইটি ক্লাস রাখার কথা থাকলেও মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে ৭টি ক্লাস চালিয়েছেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে হোস্টেল চার্জ বাবদ পাঁচ হাজার টাকার অধিক আদায় করেন অধ্যক্ষ। আদায়কৃত টাকার সম্পূর্ণ বা আংশিক ফেরত দিতে শিক্ষার্থীরা অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। শিক্ষকদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতাজনিত নৈমিত্তিক ছুটির প্রয়োজন হলেও অধ্যক্ষ তা মঞ্জুরে অপারগতা প্রকাশ করেন। ছুটি নিতে হলে নানা ধরণের হয়রানী এবং অমানবিক পরিস্তিতর শিকার হতে হয়। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর অনার্স প্রথম বর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে শিশুসহ অংশ নিতে আসা দুই ছাত্রী মাকে কক্ষ থেকে বের করে দেন এবং ভবিষ্যতে সন্তানসহ কলেজে আসতে নিষেধ করেন। এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার হলে ওই ছাত্রীদের ভয়ভীতি দেখান অধ্যক্ষ। এসব ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অপছন্দের শিক্ষকদের বিভিন্ন অজুহাতে শোকজ প্রদান করেন। এ পর্যন্ত ৪জন শিক্ষকে সোকজ করেন। এসব শোকজের জবাব দিতে গেলে তিনি তা রিসিভ কপি প্রদান করেন না। ফলে এসব নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোন কোন শিক্ষকের দাখিলকৃত জবাব পছন্দ না হলে তিনি চাপ দিয়ে পুনরায় তার ইচ্ছামত জবাব লিখিয়ে নেন।

অপরদিকে একটি বেসরকারী কলেজে ল্যাব সহকারী নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে পত্যয়ন পত্র চান। শিক্ষকরা প্রথমে অপরাগতা প্রকাশ করলে তিনি আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে চানএবং ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তাতেও ওই দুই শিক্ষক রাজী না হলে অধ্যক্ষ ওই দুই শিক্ষককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।বিভিন্ন প্রয়োজনে শিক্ষকরা ছুটি চাইলে তার পছন্দের শিক্ষকের বাইরে তিনি ছুটি দিতে চান না।

কলেজে কর্মরত শিক্ষকরা বলেন, তারা মানসিক চাপে রয়েছে। এবং ঠিকমত দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মোঃ কামরুল হাসান এবং সমাজ কর্ম বিভাগের প্রভাষক মোঃ রোকনুজ্জামানকে বদলী করে দেয়া হয় এবং অপর একজন বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোঃ ইলয়াস হোসেন আতঙ্কে বদলী নেন।

এ অবস্থায় তারা সরজমিনে তদন্ত করে শ্রেণি ও দাপ্তরিক কাজের পরিবমে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। শিক্ষকরা জানান , তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনো কোন কার্যকর ব্যবস্থা এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোছাঃ মঞ্জুরা খানম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,শিশুসহ কলেজে ছাত্রী আসার বিষয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ছুটি দেইনা এমন অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ সে সকল রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে। তিনি উল্টো বলেন, একটি চক্র বরাবরই নিেেজদর খেয়াল খুশীমত কলেজ অধ্যক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আমি কলেজের সকল অনিয়ম বন্ধ করে কলেজ উন্নয়ন মূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ওই চক্রটি মিথ্যা মনগড়া অভিযোগ করছেন। এতে আমার ও কলেজের সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments