দয়িতা, শ্রাবণের ধারার মতো অনুপ্রেরণা জোগায় লেখককে
স্বকৃত নোমান
লেখকের কি একজন দয়িতার প্রয়োজন হয়? হয়ত হয়। রবীন্দ্রনাথের ওকাম্পো যেমন, দান্তের বিয়াত্রিচে যেমন। কিংবা নজরুলের নার্গিস যেমন। লেখককে সে শ্রাবণের ধারার মতো অনুপ্রেরণা জোগায়। লেখার জন্য কি অনুপ্রেরণার দরকার হয়? সম্ভবত হয়। অনুপ্রেরণা না থাকলে লেখক লেখে কেমন করে? কিসের জন্য লেখে? কার জন্য লেখে? তার কলম চলে কেমন করে? সে আসলে লেখে দয়িতার জন্যই। দয়িতা পড়বে বলেই। হাজার পাঠকের হাজার মন্তব্য তাকে অনুপ্রাণিত করে না। কিন্তু দয়িতার একটু মন্তব্য তাকে অনুপ্রেরণার তুঙ্গে তুলে দেয়, দিতে পারে। দয়িতার জন্য সে সমস্ত কিছু বন্ধকও দিতে পারে। দয়িতার জন্য সে সব কিছু জয় করে নিতে পারে। আসলে কি তাই? ঠিক জানি না।
তবে জানি, পুরুষের জন্য নারী অনুপ্রেরণা। কেননা পুরুষের চোখে নারীর চেয়ে সুন্দর পৃথিবীতে আর কিছু নেই। নারীর চোখের চেয়ে, ভুরুর চেয়ে, ঠোঁটের চেয়ে, চিবুকের চেয়ে, টোলের চেয়ে, স্তনের চেয়ে সুন্দর আর কী আছে জগতে? কিছু কি আদৌ আছে? থাকতে কি পারে? একজন নারীর কাছেও কি পুরুষ সুন্দর? হয়ত। সুন্দর বলেই এই প্রকৃতি এত সৃজনমুখর। এত এত সৃষ্টি করে যাচ্ছে ওই সৌন্দর্যের টানেই।
আচ্ছা, দয়িতা কোনো কারণে যদি লেখককে ত্যাগ করে, লেখকের কাছ থেকে কি লেখা হারিয়ে যায়? দয়িতা কোনো কারণে যদি লেখককে আহত করে, বেদনা দেয়, লেখকের কাছ থেকে কি লেখারা চলে যায়? ঢিল খাওয়া পাখিরা যেমন উড়ে চলে যায়। যাওয়ারই তো কথা। সে তো লেখেই দয়িতার জন্য। দয়িতা নেই, কেন লিখবে? কার জন্য লিখবে? না, তেমন নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে, দয়িতার শূন্যতার যে বেদনা, সেই বেদনা হয়ত তাকে চালিত করে আরো বেশি সৃজনমুখরতার দিকে। সে হয়ত হয়ে ওঠে আরো বেশি সৃষ্টিশীল।
আচ্ছা, দয়িতা তো যৌবনের ব্যাপার। সে আসে যৌবনে। কোকিল যেমন আসে বসন্তে। কিন্তু যৌবন চলে গেলে? লেখকের তো একটা সময় যৌবন চলে যায়। তখন নারী কি আকর্ষণ করে তাকে? দায়িতা কি আকর্ষণ করে? মনে হয় না। তাহলে সে লেখে কেমন করে? অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পায়? অন্য কোনো কিছু থেকে? হাজার হাজার পাঠকের কাছ থেকে? ফুলের কাছ থেকে? পাখির কাছ থেকে? নদী-সমুদ্রের কাছ থেকে? পাহাড়ের কাছ থেকে? নাকি সে চিরতরুণ, চিরযুবক? কখনো তার বার্ধক্য আসে না। ঠিক জানি না।
আসলে হয়ত লেখকের কোনো দয়িতার প্রয়োজন হয় না। লেখক হয়ত অর্ধেক নারী, অর্ধেক নর। নারী অংশটিই হয়ত তার দয়িতা।
মহাকালে রেখাপাত
১৭ মে ২০২১