Homeজেলাজুড়েনাটোরে লালন একাডেমীর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে! বেকায়দায় লালন ভক্তরা!

নাটোরে লালন একাডেমীর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে! বেকায়দায় লালন ভক্তরা!

নাটোর নিউজ: লালন সঙ্গীত ও ফকির লালনকে নিয়ে গবেষণা, লালন চর্চা আর লালন ফকিরের জীবনাদর্শকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ নিয়ে নাটোরে প্রতিষ্ঠা করা হয় জেলা লালন একাডেমী। কিন্তু জেলা লালন একাডেমীর নিজস্ব স্থায়ী কোন অফিস বা জমি ছিলনা।

সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদ গ্রামের শরিফ উদ্দিন জেলা লালন একাডেমীর অনুকুলে ৩-১২-২০০৯ সালে ৩৯ শতাংশ পরিমান একটি জমি জেলা লালন একাডেমীকে দান করেন।

সাবেক জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন ওই জমিতে লালন একাডেমীর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এরপর থেকে লালনের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকীতে জালালাবাদ গ্রামে জাক জমক অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে একদিন করে গুরুবার পালন করা হয়। ওই সকল অনুষ্ঠানে জেলার বাইরে থেকেও লালন ভক্তরা-অনুরাগি ও শিল্পীরা। জেলা প্রশাসনের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্বাবধানে পরিচালিত হয় লালন একাডেমী কার্যক্রম। একাডেমীতে দলে দলে যোগ হতে থাকে লালনশিল্পী আর সাধুরা। সাবেক জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন নাটোরে থাকাকালে লালন একাডেমী পরিচালনা পর্ষদের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি একাডেমীর জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে স্থবির হয়ে পড়েছে একাডেমীর সকল কার্যক্রম। স্থানীয় অধিবাসী ও শিল্পীদের দাবী,সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে লালন চর্চাও।

নাটোর জেলা লালন একাডেমীর সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ খাঁন খোকা জানান, ওই বিবাদমান গ্রুপ কাউকে মানতে চায়না। তারা সকলকেই অবমাননা করে। মাঝে মাঝে এসে তারা হট্রগোল করে। এসব কারণে তিনিসহ লালনশিল্পীরা ওই একাডেমীতে যাওয়া বন্ধ করেছেন। এতে পুরাতন শিল্পীদের সঙ্গীতচর্চা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্পী তৈরীও বন্ধ রয়েছে যা সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি। এ ক্ষতি পোষানোর পাশাপাশি তাদের লালন চর্চায় ওই একাডেমীতে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

লালন একাডেমীর বর্তমান কমিটির সাধারণ স¤পাদক নয়ন হালদার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এখন প্রতি সন্ধ্যায় ওই একাডেমীতে সঙ্গীত চর্চার বদলে ওই জায়গা হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। এতে বেকায়দায় পড়েছেন তার মতো লালন শিল্পীরা।

এক প্রশ্নের জবাবে নয়ন বলেন, সঙ্গীত চর্চা বা কোন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিলে ওই দুই পক্ষ এসে সমস্যার সৃষ্টি করে। দুই পক্ষের লোকজন ওই জমির মালিকানা দাবী করে কমিটির নেতৃত্ব চায়। এমন অবস্থায় সঙ্গীত শিল্পীরা উভয়পক্ষের বিবাদ-সংঘর্ষ সম্ভাবনায় ওই একাডেমীতে যাওয়া বন্ধ করেছেন। তিনি অনতিবিলম্বে ওই সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করে বলেন,লালন একাডেমীর জন্য নিষ্কন্টক জায়গা প্রয়োজন। এব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার বজরাপুর এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে কামরুল ইসলাম ওই জমির মালিক দাবী করে বলেন,ওই জমিটি মূলত তার নানা হযরত আলী সরকারের। তার একমাত্র মামা শরিফ ছাড়াও মা ছুরাইয়া ও খালা ছুফিয়া, ছইজান এবং সামিয়ারা তার নানার সন্তান। নানা মারা যাওয়ার আগে কিছু জমি ওই মামাকে রেজিষ্ট্রি করে দেন। নানা মারা যাওয়ার পর মামা,মা ও খালাদের মধ্যে এজমালী স¤পত্তি স্থানীয় ও পারিবারিকভাবে আপোষ বন্টন হয়। এতে বর্তমানে লালন একাডেমীর জায়গাটি তার মা পান। এরপর ওই জমিটি তার মা তাকে রেজিষ্ট্রি করে দেন। এরপর জমিটির খাজনা খারিজ করে ভোগদখলও করছিলেন তিনি। অপরদিকে তার মামা শরিফ তার নিজ নামের সমস্ত স¤পত্তি স্ত্রী ছেলেকে রেজিষ্ট্রি করে দেয়। এরপর তার নামে রেজিষ্ট্রি ও খারিজ হওয়া ওই ২৬ শতক জমিও লালন একাডেমীকে রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে তাকে বেদখল করা হয়। তিনি ওই জমিটি দখল পেতে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে লালন একাডেমীর জমিদাতা শরিফ দাবী করেন,তার বাবা বেঁচে থাকতে তাকে ১০-১২ বিঘা এবং তার দুই ছেলেকে ১০ বিঘা জায়গা রেজিষ্ট্রি করে দেন। বাবার মৃত্যুর পর এজমালি জমি পারিবারিক আপোষ মিমাংসায় মায়ের অংশ দেয়া ছাড়াও সকল বোনকে ৪ বিঘা করে আর তাকে হিসেবমতো ৮ বিঘা জায়গা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ওই ২৬ শতক জমি তার অংশে রয়েছে দাবী করে তিনি আরো বলেন,সাবেক ডিসি শাহিনা খাতুনের আহবানে তিনি ওই জমি ২০০৯ সালে লালন একাডেমীর নামে ওয়াকফ করে দেন। এরপর সেখানে কাজ শুরু হলে তার বোনেরা, বাধা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ২০১৭ সালে ডিসি শাহিনা খাতুন তার তিন বোন এবং কামরুলের বাবা করিমকে ডেকে তাদের কাছ থেকে লিখিত নেন। কিন্তু করিম ও তার ছেলে কামরুল এখন পর্যন্তও তাদের জমি দাবী করেই যাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,তার বাবার জমি বন্টননামার জন্য তিনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি চলমান আছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন,কামরুল ইসলামের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করতে সদর উপজেলা নির্বাহীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর এব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ বিষয়ে নাটোরের লালন ভক্তরা বিবাদমান জমির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জালালাবাদ একাডেমীতে সকল কার্যক্রম বন্ধ এবং পাশাপাশি নাটোর শহরের বিকল্প কোন জায়গায় লালনের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান। একই সাথে জালালবাদ একাডেমীতে উভয় পক্ষের জমি সংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পতি না হওয়া পর্যন্ত আপাতত সকল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments